কলকাতা সংবাদদাতা: আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাবে খুশি নয় কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার সে কথা পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে। চিঠিতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত না থাকায়, তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব চাওয়া হয়েছে তাঁর কাছে। এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে তাঁকে। যদি সেই জবাব আলাপন না দেন, তা হলে একতরফা ভাবে কেন্দ্রের কর্মিবর্গ মন্ত্রক তাঁর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মার্চ মাসে ইয়াস পরবর্তী অবস্থা দেখতে রাজ্যে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আকাশ পথে বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখার পর কলাইকুণ্ডায় একটি বৈঠক করেন তিনি। সেই বৈঠকে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আলাপনবাবু সেখানে উপস্থিত হলেও বৈঠকে আসেননি। তখন মুখ্যসচিবকে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়, তিনি বৈঠকে যোগ দিতে চান কিনা। কিন্তু মুখ্যসচিব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সেই ঘরে গেলেও বৈঠকে যোগ দেননি। বরং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার জন্য সাহায্যের দাবিপত্র প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে তাঁর সঙ্গেই সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
ঘটনায় ক্ষুব্ধ আলাপনবাবুকে তলব করে দিল্লি। শুধু তাই নয়, ডেপুটেশন ভ্যাকেন্সিতে যোগ দিতে বলে কেন্দ্রের অধীনে। সেইজন্য ১ এপ্রিল নর্থব্লকে আসার নির্দেশও দেয়। এমতাবস্থায় আচমকাই ৩১ জুলাই আলাপনবাবু চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নেন। আর, তার পরের দিনই তিনি যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে। সেখানে রাজ্য সরকার তাঁকে মোটা অঙ্কেরই বেতন দিচ্ছে। অন্যদিকে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় তিনি দিল্লিতে না যাওয়ায় তাঁকে কড়া ভাষায় শোকজ করে কর্মিবর্গ মন্ত্রক। জবাব দেওয়ার জন্য তাঁকে তিনদিন সময় দেওয়া হয়।
৩ জুন লিখিত জবাব দিল্লিতে পাঠিয়ে দেন আলাপনবাবু। চিঠির জবাবে তিনি সোজাসাপটা জানান, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে মুখ্যসচিব পদে ছিলেন, তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মানতেই তিনি বাধ্য। মুখ্যমন্ত্রীই তাঁকে তাঁর সঙ্গে দিঘার প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যেতে বলেছিলেন। বলা বাহুল্য, আলাপনবাবুর এই চিঠি সন্তুষ্ট করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকারকে। কারণ, ৩১ মার্চই আলাপনবাবুর চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু আলাপনবাবুর হয়ে রাজ্যের তরফেই তাঁর চাকরির মেয়াদ ছ’মাস বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর চাকরির মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে দেয়। তা সত্ত্বেও তিনি ৩১ মার্চ ওই ঘটনার মাঝে হঠাৎই অবসর নিয়ে নেন। মনে করা হচ্ছে, তাঁর এই ভূমিকার মধ্যে যে ইঙ্গিত রয়েছে, তা অস্পষ্ট থাকেনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। এ ছাড়া, পরের দিনই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে নতুন দায়িত্ব দেন।
৩১ মার্চ তাঁর অবসরের পরের দিনের ওই ঘটনায় আলাপনবাবুর আচরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আচরণ করেছেন বলেই ধারণা কর্মিবর্গ মন্ত্রকের। তাই ১৬ জুন কেন্দ্রীয় সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেখানে অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড অ্যাপিল) আইনের ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী পেশাগত অসদাচরণ এবং আচরণের ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে যে সব চার্জ রয়েছে, তার ভিত্তিতে তাঁকে বড় অঙ্কের জরিমানা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সোমবার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রের কর্মিবর্গ মন্ত্রক যে চিঠি পাঠিয়েছে, তাতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, লিখিত ভাবে নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন তিনি। অথবা আত্মপক্ষ সমর্থনে সশরীরে উপস্থিত হতে পারেন। তার পর সেখানে নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন। যদি তিনি তা না করেন, তা হলে সর্বভারতীয় প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার (অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস) ৮ এবং ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
এর অর্থ, তিনি অবসরকালীন যাবতীয় সুযোগ ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁকে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ তিনি স্বীকার করে নিচ্ছেন কিনা, তা কারণ–সহ বিস্তারিত ভাবে জানাতে হবে। ওই চিঠির জবাবে আলাপনবাবু কী করেন, সেটাই এখন দেখার।